বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা করো || বিজ্ঞান কেন অভিশাপ || বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল - প্রবন্ধ রচনা করো
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা করো || বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল - প্রবন্ধ রচনা করো |
সুপ্রিয় বন্ধুরা,
তোমরা কয়েক দিন থেকে বলছিলে "বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা" নিয়ে লিখতে তাই আজকে তোমাদের জন্য একদম সহজ সরল ভাবে নিয়ে এলাম বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা - Biggan Ashirbad Na Abhishap Rachana টি এবং সঙ্গে অফলাইনে পড়ার জন্য ফ্রিতে PDF ফাইল ডাউনলোড করতে পারবে। আশাকরি এই পোস্টটি পেয়ে তোমাদের অনেক উপকার হবে । তাই আর অপেক্ষা না করে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা - Biggan Ashirbad Na Abhishap Rachana ফাইল টি ডাউনলোড করে নিন ।
◉ বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা ◉
ভূমিকা: বিজ্ঞান আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি,শিল্প ,চিকিৎসা, যানবাহন, শিক্ষা-সংস্কৃতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর অবদান অতুলনীয়। আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। মানুষ সভ্যতার বেদীমূলে দিয়েছে মস্তিষ্কের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং হৃদয়ের ভালোবাসা। বিজ্ঞান সে সভ্যতাকে করেছে গতিশীল ও অগ্রসর। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে গতি, করেছে দূর্জেয় শক্তির অধিকারী। এ কারণে বিজ্ঞান আজ অনেক ক্ষেত্রেই মানব জীবনের আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা: মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই তার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে কৌতুহলী ছিল। এই কৌতুহল থেকে বিজ্ঞান আবিষ্কার। গুহাবাসী মানুষ যেদিন থেকে আগুনের আবিষ্কার করেছিল সেদিন থেকে বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর পর ক্রমে ক্রমে মানুষ আবিষ্কার করেছিল সভ্যতা। বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগে সেই আদিম সভ্যতা আজ যন্ত্রসভ্যতার রূপ নিয়েছে। সেই আদিম মানুষের হাতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল আজ পর্যন্ত তা থামেনি। মানুষ আজ শুধু নিজেকে রক্ষা করার জন্য নয় বরং জীবনের সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে প্রয়াসী হয়েছে।
সভ্যতায় বিজ্ঞানের আশীর্বাদ: বিজ্ঞান মানুষ ও সভ্যতাকে শতভাগ এগিয়ে নিয়েছে। চলার প্রয়োজনে মানুষ আবিষ্কার করেছে নানা গাড়ি, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ওষুধ, যোগাযোগের প্রয়োজনে নানা প্রযুক্তি। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনেও মানুষ আজ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ প্রকৃতিকেও বশ মানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিজ্ঞান সভ্যতাকে করেছে আলোকজ্জ্বল, মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টিকে করেছে সুদূরপ্রসারী।
যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে: সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের যান ছিল দু পা। কিন্তু দূর-দূরান্তরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ পায়ের উপর ভর করা চলে না। তাই মানুষ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দূর দূরান্তকে জয় করার প্রয়াস পেল। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আবিষ্কার করেছে দ্রুতগামী যান- ট্রেন, জাহাজ, উড়োজাহাজ, বিমান ইত্যাদি। মহাশূন্যের অজানা জ্ঞানকে জানার জন্য আবিষ্কার করেছে রকেট, মহাকাশ যান। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তের খবর নেওয়ার জন্য আবিষ্কার করেছে ফ্যাক্স, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ই-মেইল, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন। এভাবে যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহার সারা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে : পূর্বে মানুষ রোগমুক্তির জন্য নানা লতাপাতা ও কুসংস্কারের আশ্রয় নিত। বর্তমানকালে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা করেছে। যার ফলে মানুষ দূরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করতে পেরেছে। এক্সরে, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, টেরামাইসিন ইত্যাদি জীবনকে দীর্ঘায়ু করেছে। জিন প্রতিস্থাপন, কর্ণিয়া, বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, হৃদপি-, ফুসফুস এবং যকৃতের মতো অঙ্গ মানুষ প্রতিস্থাপন করছে। আলট্রাসোনোগ্রাম, লেজাররশ্মি ও কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানুষকে অসাধ্য সাধন করেছে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান: সভ্যতার প্রথম আবিষ্কার লাঙ্গলের সময় থেকেই কৃষিকাজে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আজ বিজ্ঞানের বলে মানুষ কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি করেছে। আবিষ্কার করেছে ট্রাক্টর, সেচপাম্প, নানা কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি। বর্তমানে জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত জাতের বীজ তৈরি হচ্ছে। যা খাদ্য উৎপাদনকে শতভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আজ ধূসর মরুভূমিতেও ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারে মানুষ নিজের শ্রমলাঘব করেছে। সৃষ্টি করেছে শতভাগ খাদ্য নিরাপত্তা।
অন্যান্য ক্ষেত্র ও বিস্ময়: বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থাকে করেছে আধুনিক ও উন্নত। বর্তমানে রেডিও এবং টেলিভিশন ছাড়াও ইন্টারনেট ও কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ঘরে বসেই আজ যেকোনো তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। আবহাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহারে মানুষ প্রকৃতির রোষানল থেকে মুক্তি পেয়েছে। বিজ্ঞান আজ প্রতি মুহূর্তে আমাদের একান্ত সঙ্গী। বিজ্ঞানের বলে মানুষ দুঃখ ও প্রকৃতিকে জয় করেছে। রোবটের আবিষ্কার আজ মানুষের সময় ও শ্রম বাঁচিয়ে দিচ্ছে। টাবলেট কম্পিউটার, ট্যাব, থ্রিজি, ফোর জি ইত্যাদি প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে বিনোদনে ও বিস্ময়ে ভরিয়ে তুলেছে।
বিজ্ঞানের অভিশাপ: মানব সভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানব জীবনকে সহজ, সরল ও বিনোদনপূর্ণ করে তুলেছে। তবে বিজ্ঞান শুধু উপকার করছে না, তৈরি করেছে নানা সঙ্কট ও আশঙ্কারও। বিজ্ঞানের বলে মানুষ বেকারে পরিণত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিভিন্ন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। পৃথিবীর ওজন স্তরকে নষ্ট করছে। ফলে পৃথিবীর উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে, মেরু অঞ্চলে বরফ গলা শুরু করেছে। এছাড়াও বর্তমানে পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া যুদ্ধ-বিগ্রহগুলো তার স্পষ্ট প্রমাণ। দেশে দেশে আজ বৈজ্ঞানিক মরণাস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষার মহড়া চলছে। ফলে মানব সভ্যতাই আজ ধ্বংস ও হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বিজ্ঞান আজ আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞান অভিশাপ হওয়ার কারণ: বিজ্ঞানের দ্বারা উদ্ভাবিত মরণাস্ত্রের ব্যবহার মানুষকে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয়াকুল করে তুলেছে। তীর ধনুকের পরিবর্তে মানুষ আজ উদ্ভাবন করেছে ট্যাংক, কামান, মর্টার এবং অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়াও আবিষ্কার করেছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, পরমাণু বোমা, জীবানু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা ইত্যাদি। যা মুহূর্তে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকির ভয়াবহ ধ্বংসলীলা স্বার্থান্বেষী ক্ষমতালোভী মানুষের হৃদয়কে কোমল করতে পারেনি। আজও রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে আধিপত্য ও শক্তি প্রদর্শনের জন্যে বিজ্ঞানকে কে কত ভয়ংকর ঘাতক করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। ভীয়েতনাম, ইরান, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অগণিত নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত মানুষ শুনছে নক্ষত্রযুদ্ধের কথা, যা আরো ভয়াবহ। ফলে দেখা যাচ্ছে যে সভ্যতার গায়ে বিজ্ঞান বাসা বেঁধেছে, তারই বিনষ্টে আজ সে মেতে উঠেছে। অবশ্য এর জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়; আধিপত্য শক্তি প্রদর্শনকারী, স্বার্থান্বেষী, বর্বর মানুষরাই এর জন্য দায়ী।
অভিশাপ থেকে মুক্তির উপায়: বিজ্ঞান এক অফুরন্ত শক্তি ও সম্ভাবনার উৎস। যা মানুষের উপকার ও অপকারে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। বিজ্ঞানের অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্র আমাদের জীবনকে দিতে পারে নতুন কোনো সম্ভাবনার আভাস। তাই বিজ্ঞানের শক্তিকে অনাকাক্সিক্ষত খাতে প্রয়োগ থেকে সরে আসতে হবে। বিজ্ঞানের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিৎ করতে হবে। বিজ্ঞানের কারণে সৃষ্টি হওয়া যাবতীয় সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরি গোটা পৃথিবীতে এক সারিতে দাড়াতে হবে যাতে বিজ্ঞানের কোনো ধ্বংসাত্মক ব্যবহার না হয়। শক্তিশালী দেশগুলোর মজুতকৃত যাবতীয় ধ্বংসাত্মক অস্ত্র বিনষ্ট করতে হবে। তাহলেই বিজ্ঞান অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদে পরিণত হবে। বিজ্ঞানের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে মানব সভ্যতা।
উপসংহার: বিজ্ঞান অবশ্যই মানব সভ্যতার জন্য কল্যাণময়ী। কতগুলো স্বার্থান্বেষী নরপিশাচ মানুষই বিজ্ঞানকে মানুষের অকল্যাণে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানকে আশীর্বাদ থেকে অভিশাপে পরিণত করেছে। বিজ্ঞান যেন এ যুগের তিলোত্তমা যার হাতে আছে অমৃতভান্ডার কিন্তু তার নয়ন কটাক্ষে প্রলয়। তাই মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের সার্থক ও ইতিবাচক প্রয়োগ ঘটাতে হবে। বিজ্ঞানের অপব্যবহার রোধে সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করলেই মানব সভ্যতার অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।
◉ PDF Download Link : Click Here
Tag : বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ প্রবন্ধ রচনা করো, বিজ্ঞান কেন অভিশাপ, বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল - প্রবন্ধ রচনা করো, Biggan Ashirbad Na Abhishap Rachana বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা class 10, বিজ্ঞান কেন অভিশাপ, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ in english, বিজ্ঞান অভিশাপ, প্রযুক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ, বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল, বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ রচনা, বিজ্ঞানের কুফল, biggan-ashirbad-na-abhishap-rachana,
Thank you so much khub help holo
ReplyDeleteChoto khato rocona ki nai vandare
ReplyDeleteVery bad essay
ReplyDelete